ইসরোর অত্যাধুনিক কৃত্রিম উপগ্রহ ‘জিস্যাট ২০’ মহাকাশে উৎক্ষেপিত, সহযোগিতায় ইলন মাস্কের স্পেসএক্স

 


ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশনের (ইসরো) নতুন বাণিজ্যিক কৃত্রিম উপগ্রহ ‘জিস্যাট ২০’ আমেরিকার ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরাল থেকে সফলভাবে মহাকাশে উৎক্ষেপিত হয়েছে। এই ঐতিহাসিক অভিযানটি ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান ‘স্পেসএক্স’-এর সহযোগিতায় সম্পন্ন হয়। ভারতীয় সময় অনুযায়ী, সোমবার মধ্যরাতে ‘ফ্যালকন ৯’ রকেটের মাধ্যমে ৪৭০০ কেজি ওজনের এই কৃত্রিম উপগ্রহটি মহাকাশে পাঠানো হয়। পুরো প্রক্রিয়া শেষ হতে সময় লেগেছে মাত্র ৩৪ মিনিট।


‘জিস্যাট ২০’-এর গুরুত্ব ও ভূমিকা

‘জিস্যাট ২০’ কৃত্রিম উপগ্রহটি ইসরোর বাণিজ্যিক শাখা নিউ স্পেস ইন্ডিয়া লিমিটেডের একটি উল্লেখযোগ্য প্রকল্প। এটি তৈরি করা হয়েছে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলিতে উচ্চ-গতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য। বিশেষ করে এমন অঞ্চল, যেখানে ইন্টারনেট সংযোগ এখনও খুব দুর্বল বা অনুপস্থিত। এছাড়া, আকাশপথে বিমানযাত্রীদের জন্য ইন্টারনেট পরিষেবা উন্নত করার লক্ষ্যেও এই উপগ্রহ কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।



ইসরোর চেয়ারম্যান এস সোমনাথ জানিয়েছেন, এই কৃত্রিম উপগ্রহটি আগামী ১৪ বছর পর্যন্ত সচল থাকবে। দেশের মাটিতে এই প্রকল্পের প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো ইতিমধ্যেই প্রস্তুত।



ভারতীয় মহাকাশ প্রযুক্তির নতুন দিগন্ত

এর আগে ইসরো বিভিন্ন কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণে সফল হয়েছে। তবে ‘জিস্যাট ২০’-এর উচ্চ ওজন এবং জটিল প্রযুক্তিগত চাহিদার কারণে ইসরো এই প্রকল্পে ইলন মাস্কের স্পেসএক্স-এর সহায়তা নিয়েছে। এই উৎক্ষেপণটি ইসরো এবং স্পেসএক্স-এর যৌথ উদ্যোগে প্রথম সফল প্রকল্প হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।



ইসরোর বাণিজ্যিক শাখার চেয়ারম্যান রাধাকৃষ্ণন দুরাইরাজ ফ্লোরিডার উৎক্ষেপণস্থলে উপস্থিত থেকে পুরো প্রক্রিয়া তদারকি করেন। তিনি জানিয়েছেন, মহাকাশে নির্ধারিত কক্ষপথে ‘জিস্যাট ২০’ সঠিকভাবে স্থাপন করা হয়েছে। উৎক্ষেপণের এই সাফল্য ভারতের মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।


মিশনের সফল উৎক্ষেপণ

‘জিস্যাট ২০’ উৎক্ষেপণের জন্য ফ্লোরিডার স্পেস কমপ্লেক্স ৪০ স্থানটি বেছে নেওয়া হয়। এটি বর্তমানে ইলন মাস্কের স্পেসএক্স পরিচালনা করে এবং যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ বাহিনীর অধীনে রয়েছে। উৎক্ষেপণের সময় বেঙ্গালুরুর ইউআর রাও স্যাটেলাইট সেন্টার থেকে ইসরোর চেয়ারম্যান এবং বিজ্ঞানীরা প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করেন।


উপগ্রহের প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য

‘জিস্যাট ২০’-এর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল এটি সম্পূর্ণরূপে বাণিজ্যিক কৃত্রিম উপগ্রহ। এই প্রকল্পে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইন্টারনেট পরিষেবার গতি ও পরিধি বাড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইসরোর লক্ষ্য, ভবিষ্যতে আরও এমন উন্নত কৃত্রিম উপগ্রহ তৈরি করে ভারতের মহাকাশ কর্মসূচিকে বিশ্বমানের পর্যায়ে উন্নীত করা।


উৎক্ষেপণের যৌথ উদ্যোগ

ইসরো ও স্পেসএক্স-এর এই যৌথ উদ্যোগ আন্তর্জাতিক মহাকাশ সহযোগিতার একটি উদাহরণ হয়ে থাকবে। ২০২৩ সালে ইসরো ঘোষণা করেছিল যে তারা স্পেসএক্স-এর সঙ্গে এই প্রকল্পে কাজ করবে। উৎক্ষেপণের সময় জিস্যাট ২০-এর বিশাল ওজন ও জটিল নকশা ছিল একটি বড় চ্যালেঞ্জ। স্পেসএক্স-এর ‘ফ্যালকন ৯’ রকেট এই কাজটি নিখুঁতভাবে সম্পন্ন করেছে।


‘জিস্যাট ২০’-এর এই সাফল্য ভারতকে ডিজিটাল কানেক্টিভিটি ও মহাকাশ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ইসরোর ভাবমূর্তি আরও মজবুত হবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ