গ্রেফতার দুর্গাপুরের প্রাক্তন পুরপিতা ও প্রাক্তন পুরমাতার স্বামী





দুর্গাপুরে অবৈধ লোহা ও বালি কারবারের অভিযোগে প্রশাসনিক তৎপরতায় গ্রেফতার করা হয়েছে দুই প্রাক্তন জনপ্রতিনিধি ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের। অভিযোগ রয়েছে, দুর্গাপুর পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান অরবিন্দ নন্দী এবং প্রাক্তন কাউন্সিলর রিন্টু পাঁজা (৪২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন পুরমাতার স্বামী) দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ লোহা ও বালি কারবারের সাথে যুক্ত ছিলেন।



বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেন। অবৈধ কয়লা, বালি ও লোহা পাচার নিয়ে ক্রমবর্ধমান অভিযোগ এবং তাতে প্রশাসনের কিছু অংশের জড়িত থাকার সম্ভাবনায় মুখ্যমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, প্রশাসনের কেউ যদি এ ধরনের কাজে মদত দেয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি পুলিশ, সিআইডি, সিট ও আন্টি করাপশন বিভাগকে আরো সক্রিয় হতে নির্দেশ দেন।



এই বৈঠকের পর থেকেই প্রশাসনিক তৎপরতা শুরু হয়। বৃহস্পতিবার রাতেই আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের বারাবনি থানার ওসি মনোরঞ্জন মণ্ডলকে সাসপেন্ড করা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার ভোরে গ্রেফতার করা হয় অরবিন্দ নন্দী এবং রিন্টু পাঁজাকে।


অরবিন্দ নন্দীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি বালি চুরির একটি চক্রের সাথে সরাসরি যুক্ত। অন্যদিকে রিন্টু পাঁজার বিরুদ্ধে লোহা চুরি ও তার অবৈধ পাচারে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, প্রাথমিক তদন্তে তাদের অপরাধের প্রমাণ মিলেছে এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।



গ্রেফতারের পর দুই অভিযুক্তকে দুর্গাপুর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এই ঘটনার তদন্তে সিআইডি যুক্ত হতে পারে। শুক্রবার দুপুরে ধৃতদের দুর্গাপুর মহকুমা আদালতে তোলা হবে। পুলিশের মতে, এই মামলার সাথে যুক্ত অন্য ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে তদন্ত জারি রয়েছে এবং আরো গ্রেফতারির সম্ভাবনা রয়েছে।



অরবিন্দ নন্দী ও রিন্টু পাঁজার গ্রেফতার নিয়ে দুর্গাপুর ও রাজ্যের রাজনৈতিক অঙ্গনে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরোধীরা এই ঘটনার পর সরকারের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তবে, তৃণমূলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে দল বা প্রশাসনের কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়।


অবৈধ লোহা ও বালি কারবারের অভিযোগে প্রশাসনিক পদক্ষেপে দুর্গাপুরের সাধারণ মানুষ সন্তোষ প্রকাশ করেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা মনে করছেন, এর ফলে চুরি ও পাচার রোধে প্রশাসনের নজরদারি বাড়বে এবং এলাকাজুড়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হবে।


এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, মুখ্যমন্ত্রীর কঠোর মনোভাবের পর প্রশাসন এখন কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হচ্ছে। তবে, পুরো ঘটনা থেকে কি শিক্ষা নেওয়া যায় এবং অবৈধ চক্র নির্মূল করতে প্রশাসন কতটা সফল হবে, তা সময়ই বলবে।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ