বার্নপুরের হিরাপুর ঠাকুরবাড়ির মদন গোপাল জিউ মন্দিরের রাস উৎসব

 




পশ্চিম বর্ধমান জেলার বার্নপুরের হিরাপুর ঠাকুরবাড়ির মদন গোপাল জিউ মন্দিরটি ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় গুরুত্ব বহন করে। যদিও এর সঠিক প্রতিষ্ঠাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া কঠিন, তবে এটি কয়েক শতাব্দী পুরনো। ধারণা করা হয়, কাশিপুরের রাজা এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। সেই সময় থেকেই মদন গোপাল জিউর মূর্তি এখানে পূজিত হয়ে আসছে।


রাস উৎসবের ইতিহাস

রাস উৎসব হিরাপুরে বহু বছর ধরে পালিত হয়ে আসছে। প্রায় ৩ooবছরের পুরনো এই উৎসবটি স্থানীয়ভাবে প্রচলিত একটি ঐতিহ্য। প্রাচীনকালে জমিদারদের উদ্যোগে রাস উৎসব শুরু হয়েছিল। তখন এটি শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় উৎসব ছিল, যা ধীরে ধীরে বৃহৎ সাংস্কৃতিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানে পরিণত হয়।



রাস উৎসবের বৈশিষ্ট্য

প্রস্তুতি ও শুরু:

কার্তিক মাসের পূর্ণিমা উপলক্ষে এই উৎসব শুরু হয়। কয়েকদিন আগে থেকেই মন্দির সজ্জিত করা হয়, এবং ঠাকুরের জন্য বিশেষ পোশাক ও অলংকার তৈরি করা হয়।


ঠাকুরের বিশেষ ভক্তিমূলক সাজসজ্জা:

মদন গোপাল জিউ ও রাধার মূর্তিকে সোনার অলংকার, চমৎকার পোশাক এবং ফুলের মালায় সাজানো হয়। ভক্তরা ঠাকুরের দর্শনের জন্য ভিড় করেন।



ভক্তিমূলক কার্যক্রম:

রাস উৎসবের সময় মন্দির চত্বরে কীর্তন, যাত্রাপালা, এবং ভক্তি-নৃত্য পরিবেশিত হয়। বিভিন্ন স্থান থেকে শিল্পী এবং যাত্রাদল অংশগ্রহণ করেন।


রাস যাত্রা ও মেলা:

রাস উৎসবের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো রাস যাত্রা। মদন গোপাল জিউ ও রাধার মূর্তিকে রথে বসিয়ে মন্দিরের চারপাশে শোভাযাত্রা করা হয়।  যেখানে হস্তশিল্প, খেলনা, এবং খাদ্য সামগ্রী বিক্রি হয়।


সামাজিক সংযোগ:

রাস উৎসব শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় উদযাপন নয়, এটি স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য একটি বড় মিলনমেলার মতো কাজ করে। পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং আত্মীয়রা একত্রিত হয়ে উৎসব উদযাপন করেন।


ঐতিহ্যবাহী গুরুত্ব

রাস উৎসবের মূল উদ্দেশ্য হলো রাধা-কৃষ্ণের লীলার প্রতি ভক্তি প্রকাশ এবং সমাজে ঐক্য প্রতিষ্ঠা।বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষও এই উৎসবের আনন্দ ভাগ করে নেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ