শান্তিপুরের ভাঙা রাসের পৌরাণিক কাহিনি

 




নদীয়া :- শান্তিপুরের ভাঙা রাসের রীতি এবং তার ঐতিহাসিক ও পৌরাণিক গুরুত্ব অত্যন্ত সমৃদ্ধ। এটি শান্তিপুরের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় ঐতিহ্যের এক অনন্য উদাহরণ।


রাইরাজা এবং ভাঙা রাসের পৌরাণিক কাহিনি

ভাঙা রাস উৎসবের মূল কাহিনির মূলে রয়েছে শ্রীকৃষ্ণের রাসলীলার এক বিশেষ অধ্যায়। চৈতন্য চরিতামৃত এবং শ্রীমদ্ভাগবত অনুসারে, মহাদেব যখন গোপিনীর ছদ্মবেশে রাসমণ্ডলে প্রবেশ করেন, তখন শ্রীকৃষ্ণ তা উপলব্ধি করেন এবং অন্তর্ধান করেন। শ্রীকৃষ্ণের অনুপস্থিতিতে রাধাকে রাসমণ্ডলের নেতৃত্ব দেওয়া হয়, এবং তখন থেকেই রাধিকা রাজা বা রাইরাজার ধারণার জন্ম। শ্রীকৃষ্ণ অন্তর্ধান করেন যে সময়ে, সেটি “ভাঙা রাস” নামে পরিচিত।



উৎসবের রীতি

ভাঙা রাস উৎসবে শোভাযাত্রার মূল আকর্ষণ "রাইরাজা"। রাইরাজা রূপে সাধারণত কিশোরী কুমারীদের মনোনীত করা হয়, যাঁরা ঐতিহ্যবাহী পোশাক ও অলংকারে সজ্জিত হয়ে শহর পরিক্রমা করেন। আগে কেবল ব্রাহ্মণ পরিবার থেকে কুমারী নির্বাচন করা হলেও বর্তমানে বিভিন্ন গোষ্ঠীর মেয়েরাও অংশ নেন।


বিগ্রহ এবং শোভাযাত্রা

শান্তিপুর শহরের বিখ্যাত গোস্বামী পরিবারের পাশাপাশি অন্য অনেক বিগ্রহ পরিবারেরও নিজস্ব শোভাযাত্রা রয়েছে। প্রতিটি পরিবার তাদের আরাধ্য রাধাকৃষ্ণের মূর্তি এবং রাইরাজা নিয়ে শহর পরিক্রমা করে। এই উৎসবের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল বিগ্রহগুলোর সুসজ্জিত রূপ এবং শোভাযাত্রার সঙ্গীত ও আলোকসজ্জা।


তাত্পর্য এবং আধুনিক প্রেক্ষাপট

ভাঙা রাস উৎসবের গুরুত্ব কেবল ধর্মীয় নয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক। এটি শান্তিপুরের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সম্প্রদায়ের একতা তুলে ধরে। যদিও আধুনিক কালে কিছু নিয়ম শিথিল হয়েছে, তবুও ঐতিহ্যবাহী রীতিগুলি এখনো রক্ষিত।


উপসংহার

শান্তিপুরের ভাঙা রাস এবং রাইরাজার প্রথা শুধু স্থানীয় মানুষদের নয়, বহিরাগত দর্শনার্থীদেরও আকৃষ্ট করে। এই উৎসব প্রাচীন ভারতের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক হিসেবে রয়ে গেছে।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ