মণিপুর থেকে বারুইপুরের রাস ময়দানে জীবনযুদ্ধ! সার্কাসের তাঁবুতে জীবিকার টানে হাসি-আনন্দ বিলিয়ে চলেছেন মণিপুরের শিল্পীরা

 




বারুইপুর: নেই বাঘ, সিংহ, হাতি, জলহস্তি কিংবা পাখির খেলা। তবু বারুইপুর রাস মাঠে মানুষের ভিড় উপচে পড়ছে। কারণ একটাই—মণিপুরের শিল্পীদের মনোমুগ্ধকর ব্যালেন্স আর জাগলিংয়ের খেলা। একদিকে হিংসার আগুনে পুড়ছে মণিপুর, অন্যদিকে বারুইপুরের রাস মাঠে হাসি মুখে দর্শকদের মনোরঞ্জন করছেন সেখানকার শিল্পীরা।


জীবিকার প্রয়োজনে বাড়ি-পরিবার ছেড়ে বারুইপুরে এসেছেন তাঁরা। শত দুঃখ-কষ্ট, আতঙ্ক আর পরিবারের চিন্তা সত্ত্বেও, দিন-রাত তিনটি শো করে মনোরঞ্জনের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। দর্শকরা মুগ্ধ হলেও, এই শিল্পীদের মন পড়ে আছে দূর মণিপুরে, তাঁদের বাড়িতে।


মণিপুরের রাজধানী ইম্ফল থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে থৌবালে রয়েছে রবিন সিং, মোহন দাস, রৌশনদের পরিবার। অন্যদিকে, রবিন, মোহন ও পুস্পা রানীর মতো ১২ জন মণিপুরি শিল্পী বারুইপুরে সার্কাসের তাঁবুতে কঠোর পরিশ্রম করে চলেছেন। খেলা শেষে তাঁরা ছুটে যাচ্ছেন মোবাইল হাতে পরিবারের খবর নিতে। তবে ইন্টারনেট পরিষেবা স্বাভাবিক না থাকায় পরিস্থিতি জানতে বারবার বাধা পড়ছে।


রবিন সিং বলেন, “বাড়ির বাবা-মার কথা ভেবে সারাক্ষণ দুশ্চিন্তায় থাকি। এখনও পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে শুনেছি, কিন্তু কতদিন থাকবে জানি না।" তাঁর স্ত্রী পুস্পা রানীও স্বামীর সঙ্গে আছেন। তিনি বলেন, “মনিপুরের এমন পরিস্থিতি হবে ভাবিনি। আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ নেই। তবু দর্শকদের আনন্দ দেওয়ার চেষ্টা করছি।"


এদিকে, আসাম, হায়দ্রাবাদ ও অন্যান্য ভিন রাজ্যের শিল্পীরাও উদ্বিগ্ন সার্কাস শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে। জীবজন্তুর খেলা নিষিদ্ধ হওয়ার পর সার্কাসে দর্শকের আকর্ষণ কমেছে। শিল্পীরা জানাচ্ছেন, তাঁদের বিকল্প কোনো কাজ শেখা নেই। তাই এই পেশাই তাঁদের বাঁচার একমাত্র উপায়। তবে নিজের পরবর্তী প্রজন্মকে এই পেশায় না আনার সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছেন অনেকে।


বারুইপুরের রাস মাঠে সার্কাসের আলো-আঁধারিতে যখন দর্শকরা বিনোদনে মগ্ন, তখনই তাঁবুর আড়ালে চলছে শিল্পীদের জীবনযুদ্ধ, যেখানে প্রতিটি মুহূর্তে তাঁদের মন পড়ে থাকে দূরের মণিপুরের হিংসাত্মক পরিস্থিতিতে।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ