বিলুপ্তির পথে বহুরুপীদের প্রাচীন শিল্প

 


বাঁকুড়া ও বীরভূমের নানা গ্রামে আজও টিকে রয়েছে বহুরুপীদের প্রাচীন শিল্প। লাভপুর এলাকার বিষয়পুর-ভালুককুঠীর মতো জায়গা থেকে একদল বহুরুপী আজও বেরিয়ে পড়েন মুখে রঙ মেখে, হাতে ঝোলা নিয়ে। কখনো কালী, কখনো শিব, কখনো হনুমান সেজে মানুষের মনোরঞ্জন করেন তাঁরা। সামান্য যে রোজগার হয়, তা দিয়েই কোনো রকমে সংসার চালান এঁরা। তবে বর্তমান সময়ে এই প্রাচীন শিল্প ক্রমশ হারিয়ে যেতে বসেছে।


বহুরুপী চন্দন চৌধুরী বলেন, “বাপ-ঠাকুর্দার পেশা ছেড়ে উঠতে পারিনি। আমাদের এই ঐতিহ্যবাহী শিল্পকে ধরে রাখার জন্য আমরা আজও রঙ মেখে, বিভিন্ন সং সাজিয়ে পথে নামি। সামান্য কিছু রোজগারের আশায় আমাদের জীবন কাটে। কিন্তু এই পেশায় আর আগের মতো সম্মান বা অর্থ দুই-ই নেই।”



চন্দনের মতো আরও বহু বহুরুপী, যেমন পুতুল চৌধুরী, একই কথা বলেন। পুতুলবাবুর মতে, “এই পেশায় নতুন প্রজন্মের আর কোনো আগ্রহ নেই। সংসার চালানোর মতো পর্যাপ্ত উপার্জন হয় না বলে অনেকেই এই কাজ ছেড়ে জন মজুরির কাজ করেন বা অন্যের জমি ভাগে চাষ করেন। শিল্পটি ক্রমশ বিলুপ্তির পথে এগোচ্ছে।”


এই প্রাচীন শিল্প বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত। একসময় গ্রামে গ্রামে এই বহুরুপীরা মানুষের মনোরঞ্জন করতেন। তাঁদের অভিনয়, সং, রূপ বদলের চাতুর্যে মুগ্ধ হতেন সকলে। কিন্তু আধুনিক যুগে সেই ঐতিহ্য ক্রমেই গুরুত্ব হারাচ্ছে। যেখানে একসময় শিল্পের মাধ্যমে তাঁরা জীবিকা অর্জন করতেন, সেখানে আজ তাঁদের পরিবার বাঁচাতে অন্যান্য কাজের দিকে ঝুঁকতে হচ্ছে।



সরকারি বা বেসরকারি সংস্থার সাহায্য ছাড়া এই প্রাচীন শিল্পকে বাঁচানো প্রায় অসম্ভব। বহুরুপীদের মতে, যদি তাঁদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়, তবে হয়তো এই প্রাচীন সংস্কৃতি আবার পুনরুজ্জীবিত হতে পারে। নইলে বাংলার সাংস্কৃতিক ভাণ্ডার থেকে একটি ঐতিহ্য চিরতরে হারিয়ে যাবে।


গ্রামীণ সংস্কৃতির এই জীবন্ত প্রতীককে ধরে রাখতে প্রয়োজন সচেতনতা ও সহায়তার। প্রাচীন বহুরুপী শিল্প বাঁচাতে সমাজ ও প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগ আবশ্যক। নইলে ইতিহাসের পাতায় থেকে যাবে কেবলই বহুরুপীদের গল্প, তাঁদের বাস্তব জীবন নয়।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ